মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পটুয়াখালীর ইসহাক সিকদারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ৮ম সাক্ষী তার জবানবন্দি পেশ করেছেন।
জবানবন্দিতে সাক্ষী আব্দুল আলী ফকির বলেন,পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকাররা আমার দুই ভাই শামসুল ফকির ও করম আলী ফকিরসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করে। তারা পটুয়াখালী সার্কিট হাউজে আকট ভাবী ফুল বানুসহ অন্য মহিলাদের ধর্ষণ করে।
জবানবন্দি শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীর জেরার কার্যক্রম শেষ করেন। মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৯ ডিসেম্বর দিন ঠিক করা হয়।
অন্যদিকে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মন্ডলসহ চার আসামির মধ্যে পলাতক দুই জনের বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খুলনার বটিয়াঘাটার অপর এক মামলায় সাত জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৯ নভেম্বর দিন ঠিক হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, মো. মুখলেসুর রহমান বাদল, সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি ও রিজিয়া সুলতানা চমন। পটুয়াখালীর ইসহাক সিকদারসহ ৫ জনের অষ্টম সাক্ষী তার জবানবন্দিতে বলেন, আমার নাম আব্দুল আলী ফকির। বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৬ বছর। ঠিকানা গ্রাম, ইটবাড়িয়া, থানা- পটুয়াখালী সদর, জেলা- পটুয়াখালী।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ২০ বছর। আমি লেখাপড়া জানি না। ১৯৭১ সালে আমি কৃষি কাজ করতাম। এখনও কৃষিকাজ করি। ১৯৭১ সালের বৈশাখ মাসের ২০ তারিখ দুইটা আড়াইটার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম।
তখন আমি দেখি যে, পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকাররা ১০-১২ জন মহিলা,২/৩ জন বাচ্চা ও একজন পুরুষকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাড়ির দিকে আসছে। তখন আমার চাচাতো ভাই রশিদ ফকির বাড়ির পুর্ব পাশে জঙ্গলে গিয়ে লুকাই। সেখান থেকে দেখতে পাই যে,শামসুল ফকির,করম আলী ফকির,বাড়ির কামলা আক্কেল আলীকে পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকাররা বাড়ির উত্তর পাশে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এরপর আমার ভাবী ফুল বানুকে আর্মি ও রাজাকাররা আটক করে অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে উত্তর দিকে নিয়ে যায়।
এরপর জঙ্গল থেকে বের হয়ে আমার ভাইদের লাশের পাশে আসি এবং অন্যান্য লোকজন ডেকে তাদের কবর দেই। আসামি এছাহাক শিকদার,ছত্তার প্যাদা, আউয়াল মৌলভী, গণি হালদার ও সোলেমান মৃধা আমার বর্ণিত ঘটনার সময় পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকারদের সঙ্গে ছিল।
পরে আমি শুনি যে,মহিলাদের সার্কিট হাউজে নিয়ে আটক রেখে আর্মি ও রাজাকাররা ধর্ষণ করে। এর চারদিন পর আমার ভাবীকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়। পরে ডাক্তার এনে তার চিকিৎসা করাই । আমার ভাবীর কাছ থেকে জানতে পারি যে, তাকে পাটুয়াখালী সার্কিট হাউজে আটক রেখে আর্মি ও আমার বর্ণিত রাজাকারসহ অন্যান্য রাজাকাররা ধর্ষণ করেছে। আমার ভাবী এখন জীবিত নাই।
Leave a Reply